গল্প : ধারাবাহিক [পর্ব- দুই] লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
গল্প : ধারাবাহিক [পর্ব- দুই] লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

সোমবার, ২৩ আগস্ট, ২০২১

গল্প : ধারাবাহিক [পর্ব- দুই] শেকড়ের ডানা

শেকড়ের ডানা

ইয়াসমিন হোসেন

তিন বছর পরের কথা আহেদ আলী আরও তিন সন্তানের জনক হয়েছে দুটো মেয়ে একটা ছেলে তবে ছেলেটি বাঁচেনি জন্মের পরপরই মারা গেছে তা হলেও প্রথম সন্তান মিলে তার এখন তিন সন্তান প্রথমটা হামাগুড়ি অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে

তিন বছরে অবশ্য তার একটা বড় ক্ষতি হয়েছে সিএন্ডবির চাকরিটা চলে গেছে সরকারি চাকরি সহজে যায় না কিন্তু তারটা গেছে কী কারণে গেছে- সেটা সে কাওকে বলে না তবে চাকরি চলে যাওয়ায় সমস্যা হয়নি হাতে মোটামুটি ভাল টাকা এসেছিল আবার রহমানের জায়গাটা পরিস্কার করে বসবাসের উপযোগী করায়ও লাভ হয়েছে এসব দিয়ে নিজের জায়গায় গোটা তিনেক লম্বা লম্বা ঘর তুলেছে আরও কিছু কাজ করেছে বাকি অংশ জুড়ে কখনও হলুদের ক্ষেত, কখনও আলু-পেঁয়াজ-মরিচ আর মুলার ক্ষেত করেছে এগুলো বিক্রি করেও কয়েক মৌসুমে বাড়তি আয় হয়েছে তাতে অভাবটা থাকেনি যদিও পরিবার কোন সুবিধা পায়নি কারণ পরিবারের জন্য এক পয়সাও কাজে লাগায়নি সে এখন ঠিক করেছে, যে তিনটা ঘর তুলেছে তার একটায় থাকার ব্যবস্থা করে বাকি দুটো ভাড়া দেবে একটা ছাত্রাবাস বানাবে, আরেকটা ঘরভাড়া দেবে এছাড়া থাকার ঘরটার মাঝামাঝি পার্টিশন দিলে তার একটাও ভাড়া দেওয়া যায়

মাসের মধ্যে ভাবনাগুলো বাস্তবায়ন করে ফেললো আহেদ ছাত্রাবাসে অন্তত এক ডজন ছাত্রের জায়গা হলো ঘরটায়ও একটা ভাড়াটিয়া জুটে গেল এখানেই থেমে থাকলো না নিজের এলাকার এক অবসরপ্রাপ্ত দারোগার ছেলেকে জায়গীর হিসেবে রাখলো থাকার ঘরের পার্টিশন দেওয়া অংশে মানুষজনকে Ôজায়গীর হিসেবে রেখে উপকার করছে- প্রচার করলেও বাস্তবতা ছিল উল্টো রীতিমতো মাসিক টাকা এবং চাল-ডাল বাবদ আলাদা খরচ আদায় করতে লাগলো সে এতে নিজের তো কোন খরচ হচ্ছিলই না, উপরোন্ত বাড়তি আয় হচ্ছিল

এইসঙ্গে আরও কিছু পথ তৈরি হতে যাচ্ছে বন্ধু রহমান এখন নিজেই জায়গার উপর চলে এসেছে নিজের এবং অন্য এক বন্ধুর পরিবারের জন্য দুইটা বিরাট বিরাট টিনের বাড়ি বানাচ্ছে নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে এখান থেকেও প্রতিনিয়ত টাকা আয় করছে আহেদ রহমানের সঙ্গে আরও কথা হয়েছে তার গাড়ির ব্যবসা আছে সেগুলোর জন্য গ্যারেজ দরকার আহেদ সেই গ্যারেজের জন্য জায়গা দিতে চেয়েছে জায়গা জুড়ে অবশ্য হলুদ লাগানো ছিল এই সিজনেই সেগুলো বিক্রি হয়ে যাবে তারপর সেই জায়গা গ্যারেজ হিসাবে রহমানের কাছে ভাড়া দেওয়া হবে

যে ভাবনা সেরকম কাজই হলো মাসখানেক পর আহেদের জায়গায় গ্যারেজ হলো সেখানে রহমানের মাইক্রোবাস, ট্যাক্সি আর বেবিট্যাক্সি রাখা হলো চালু গাড়ির সঙ্গে বেশ কতগুলো অচল গাড়িও ওই জায়গায় রাখা হলো লাভ ভালই হতে লাগলো আহেদের এক পর্যায়ে রহমানের একটা বেবিটাক্সিও অল্প টাকায় কিনে নিতে পারলো এটা আহেদ নিজেই চালিয়ে ভাড়া খাটাতে লাগলো আরেকটা আয়ের পথ বের করেছিল সে লোকজনের সঙ্গে মিশে হোমিওপ্যাথী ডাক্তারির কৌশল শিখেছিল এরপর কিছু বইপত্র পড়াশুনা করে একজন স্বঘোষিত হোমিও ডাক্তার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে ফেললো ঘরে একটা সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে ব্যবসাটা যুক্ত করেছে ফলে চারদিক থেকে আয়ের পথ তৈরি হয়েছে

কেটে গেল আরও দুবছর এরমধ্যে আরও এক কন্যা সন্তানের জনক হয়েছে আহেদ আলী খুব শীঘ্রই আরও একটা সন্তান হবে এদিকে ভাগ্যের চাকায় আরও উন্নতি যোগ করতে নতুন কিছু কৌশল নিয়েছে সে মুসলিম লীগের লোকজনের সঙ্গে খাতির জমিয়েছে জামায়াতে ইসলামীর লোকজনের সঙ্গে দহরম-মহরম বাড়িয়েছে মাথায় টুপি পড়েছে, গোফ কেটে দাড়ি রেখেছে আগে সিনেমা দেখতো, বিড়ি খেতো- সেগুলো ছেড়ে দিয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠানে পূজা-পার্বনে জড়িত থাকতো- এখন সেটা থেকেও সরে এসেছে অবশ্য হিন্দু প্রতিবেশিরা এখনও আগের মত খাবার-দাবার-ভোগ-মৌসুমি ফলমূল পাঠায় সেগুলোতে না করেনা সে কারণ এতে নিজেরই লাভ অবশ্য সে যে ধার্মিক- সেটা প্রমাণ করতে বাকি রাখে না এটা করতে গিয়ে একটা খবরদারির ভাবমূর্তিও গড়া যাচ্ছে

নতুন কৌশলের কারণে সে একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতার চাকরি পেয়ে গেছে ভাগ্য খুলেছে আরও জায়গায় শহর থেকে দূরে গ্রামের দিকে তিন এলাকায় তিনটে ফসলী জমি কিনেছে সেগুলো বর্গা দিয়ে ধান-চাল ঘরে তুলছে শহরের ভেতরও গোটা পাচেক দালানঘরসহ জায়গাও কিনেছে

আহেদ আলী নিজেকে নিয়ে ভাবছিল এবার সংসারে আরেক ছেলে সন্তান এসেছে সাত বছরে নিয়ে দাঁড়ালো দুই ছেলে আর চার মেয়ে মোট ছয় এতেকরে একের পর এক মুখ বেড়েছে খরচ না করলেও খরচ বেড়েছে  ইদানিংকালে স্ত্রী মাসের পর মাস প্রসবজনিত অসুস্থতায় ভোগে মারা যায় যায় অবস্থা হয় তবে কোন চিকিৎসা করেনা আহেদ ওষুধপত্র কেনে না মনে করলে হোমিওপ্যাথীর দুই-এক ফোটা দিয়ে চালিয়ে নেয় দায়িত্ব এখানেই শেষ করে সংসারে অন্ন-বস্ত্রের অভাবে অনবরত দিশেহারা অবস্থা চললেও নিয়ে একেবারে আক্ষেপ নেই তার

আহেদের ভাবনা প্রথম ছেলেটাকে নিয়ে ওর নাম রাহু মানে মোহাম্মদ রায়হানুল হক, ডাক নাম রাহুল সংক্ষেপে রাহু আহাদ চায়, এটা ঠিক তার মতই হোক কিন্তু কেমন যেন খটকা লাগে ওর এইটুকু বয়সের চালচলনে সন্দেহ হয় নিজের স্ত্রী শতভাগ বশে, কিন্তু এই ছেলে বশে থাকবে তো? এখন ওর বয়স ছয়ে এটা কোন বয়সই না কিন্তু কথা শোনেনা প্রচÐ জিদ একবার ওকে এক ইসলামী জালসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেখানে একেবারে শিশুদের জন্য একটা আয়োজন ছিল হাতের নখের ভেতর এক নবীর নৌকা যাত্রা দেখানো হচ্ছিল অনেকেই তাদের শিশু বাচ্চাদের ওই নৌকাযাত্রা দেখাচ্ছিল সবাই দেখছিল আর শুকরিয়া আদায় করছিল আহেদও রাহুকে নিয়ে সেখানে গিয়েছিল মওলানা সাহেব তখন ওর নখে তেল মেখে ভাল করে তাকিয়ে থেকে দেখতে বলেছিল কানে কানে বলছিল, Ôদেখো একটা নৌকা সেই নৌকায় নবীজি হেলতে দুলতে নৌকাটি এগুচ্ছে মওলানা সাহেব বারবার নখ নেড়ে চেড়ে বলছিল, Ôদেখতে পাচ্ছো খোকা? নৌকা আর নবীজিকেরাহু বার বার বলছিল, Ôনা দেখতে পাচ্ছি না তেলের জন্য শুধু চকচক করছে কোন নৌকা নেই এভাবে বারবার চেষ্টার পর মওলানা সাহেব হাল ছেড়ে দিয়েছিল এই হলো অবস্থা অহেতুক কোন কিছু ওকে বিশ্বাস করানো যায় না

কেমন যেন উল্টো পথের দিকে নজর ওর এখনই মানুষকে ভালবাসা শুরু করেছে প্রতিবেশির প্রয়োজনে ছুটে যাচ্ছে তাদের কাজে সাহায্য করছে নিজের গতর খাটিয়ে উপকারও করছে মিথ্যা কথা বলানো যায় না কাউকে ঠকাতে চায়না কারও ক্ষতি চায়না আহেদের জন্য এসব মোটেই ভাল লক্ষণ নয় ভাবলো, আরও বড় হবার আগেই ওকে ষোল আনা বশে আনতে হবে বশে রাখার জন্য অনেক কিছু করছেও পাঁচ ওয়াক্তো নামাজ পড়তে বাধ্য করছে, আরবি শেখাচ্ছে অবাধ্য হলে কথায় কথায় বেদম মারধর করছে কিন্তু লাভ হচ্ছে বলে মনে হয় না হয়তো আশপাশের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে মিশে এমন হচ্ছে কিংবা আরবি লাইনের বদলে স্কুলে ভর্তি করে দেওয়ার ফলেও এটা হতে পারে স্কুলের বিজ্ঞান শিক্ষাকে মোটেও পছন্দ নয় আহেদের এগুলো ধর্মের ব্যাখ্যাগুলোকে মিথ্যা প্রমাণিত করে যেমন ওকে বোঝানো হয়েছিল, Ôশয়তান ইবলিশ যখন ক্ষুধার্ত হয়ে আকাশে বেহেস্তের দিকে হাত বাড়ায়, তখন আল্লাহর ফেরেস্তোরা তার দিকে আগুন ছুড়ে মারে ওটাকেই আমরা মেঘের সময় আগুনের চমকানি হিসেবে দেখি এটাই হাদিসের কথা, কোরআনের কথা এটা মাথায় ঢুকিয়ে রাখা সত্ত্বেও একদিন হঠাৎ এসে বললো, Ôএটা মিথ্যা কথা আকাশে মেঘ জমলে মেঘে মেঘে ঘর্ষণ লাগে, সে কারণেই বিদ্যুৎ চমকায় এটা বিজ্ঞানের কথা রাগে ক্রোধে তখন আহেদকে ফুঁসতে হয়

তারপরেও চাকরি-বাকরির জন্য রাহুকে স্কুলে দিয়েছে কিন্তু বিপথে গেলে সেখান থেকে সরিয়ে আনতে হবে আহেদ ভাবলো তাকে আরও কঠোর হতে হবে প্রতিবেশির ছেলেমেয়েদের সঙ্গে রাহুকে মোটেও মিশতে দেওয়া যাবেনা ওর মধ্যে একটা বেপরোয়া ভাব আছে ওটা ভেঙে দিতে হবে

 

--------- চলবে ----------

ঢাকা থেকে মালদ্বীপ ভ্রমণ- ৩ [Dhaka to Maldives Travel-3]

  ঢাকা থেকে মালদ্বীপ ভ্রমণ - ৩ [Dhaka to Maldives Travel-3] ঢাকা থেকে মালদ্বীপ ভ্রমণ- ৩ [Dhaka to Maldives Travel-3] : কোথাও নীল কোথাও স...