শেকড়ের ডানা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
শেকড়ের ডানা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

শনিবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৩

গল্প : ধারাবাহিক [পর্ব- তেরো] শেকড়ের ডানা


 শেকড়ের ডানা

-        ইয়াসমিন হোসেন

পাপ আর পূণ্যকে তেমন এটা গুরুত্ব দিতে রাজী নয় আহেদ আলী তার কথা, পাপ হলো কেতাবের কথা বাস্তবে ওইসব মানতে গেলে বেঁচে থাকা সম্ভব নয় বাঁচতে হলে পাপ করতেই হবে এটা প্রকৃতির নিয়ম সেই নিয়মই পালন করেছে সে আর ধর্ম? এটা হলো একটা বর্ম বা ঢাল এটা দিয়ে পাপকে ঢেকে রাখতে হয়, আর অন্যকে পদানত করতে হয় যাদের জ্ঞান কম, বা যাদের জানাশোনা কম- তাদেরকে পায়ের নিচে দাবিয়ে রাখতে ধর্ম হলো উত্তম হাতিয়ার ব্যবসা-আয়-রোজগারের জন্যও বড় হাতিয়ার সেই হাতিয়ারই আহেদ আলীর শক্তি এটা দিয়েই তাকে মাথা উঁচু রাখতে হচ্ছে শক্তিকে পোক্ত করতে ধর্মের একটা লেবাস রাখতে হয়, হজ করতে হয়, নামাজ-রোজা করতে হয় আহেদ আলী এসব করেছে বলেই না মাথা উঁচু করে কথা বলতে পারছে হোক পাপের টাকায় এতোসব- কিন্তু হাতে ধর্মের ঢাল থাকলে কার সাধ্য পাপী বলে? তা বলার সাহস কারও নেই আহেদ আলীর বল শক্তি এটাই পাপের টাকা মনে করলে স্ত্রীকে নিয়ে হজও করা হতো না, এতিমখানা-মাদ্রাসা-ধর্মপ্রতিষ্ঠানে দান করাও সম্ভব হতো না না খেয়ে মরে ভুত হয়ে যেতে হতো সুতরাং এসব নিয়ে কোনরকম ভয়-ভীতি-দুঃখ-কষ্ট নেই আহেদ আলীর

তবে আহেদ আলী চিন্তিত বর্তমান নিয়ে ব্যাংকে ভাল টাকা জমানো আছে ঠিক কিন্তু নতুন আয় তো নেই আয় না থাকলেও ব্যয় তো থামেনি আয় ছাড়া চলতে গেলে রাজার ধনও ফুরিয়ে যায়, আমি তো কোন্ ছাড়! সুতরাং নতুন আয় চাই নতুন কৌশল চাই, ফন্দি চাই বড় ছেলেটা তো গেছেই, এখন ছোট দুইটাকেমানুষবানাতে না পারলে সব শেষ!

দুইটার মতিগতি অবশ্য খুব ভাল যদিও মেজোটা একেবারেই কথাবার্তা শুনতে চায় না, কিন্তু ভিতরটা ঠিক নিজের মতইমানুষ কেউ যদি এইমানুষবলতেইবলিসবোঝে, বুঝুক তাতে আহেদ আলীর আসে যায় না আহেদ আলীর ছেলে আহেদ আলীই হবে- এটাই শেষ কথা বড়টা খসে গেছে, বাঁচা গেছে তাই ছোট দুইটাই ভরসা

একটা ফন্দি বা কৌশল বের করে ফেললো আহেদ এটা সফল করতে পারলে হাতে নগদ কিছু টাকাও আসবে, আপদকেও ভাগানো যাবে আহেদ জানে, মেজো মানে লিণ্টুর ভেতরে যৌবনের ডাক এসেছে আর সে জন্য এদিক-সেদিক বেশ দৌড়াচ্ছে মেয়ে দেখলেই ছুক ছুক করে মনে মনে হাসে আহেদ, একেই বলেবাপ কা বেটা সিপাই কা ঘোড়া এই ঘোড়া এখন দৌড়াতে শুরু করেছে প্রেম নিবেদন করতে স্বজন-নিকট আত্মীয় বলে কাউকে মানছে না কানে এসেছে- নিজের বড় শ্যালকের মেয়ের সঙ্গে বেশ ভাব জমিয়ে ফেলেছে পালিয়ে বিয়ে-টিয়ে করার মত চিন্তা-ভাবনাও চলছে এইটাই সুবর্ণ সুযোগ এমনিতেই কথা শোনে না, ডানে যেতে বললে যায় বায়ে, বায়ে যেতে বললে যায় ডানে সুতরাং এইটাকে ফাঁদে আটকানো দরকার, আর সেই সুবাদে যদি কিছু হাতে নগদ লক্ষ্মী আসে- তাহলে আর চাই-কি!

আহেদ লিণ্টুকে ডাকলো বললো, তোর জন্য মেয়ে ঠিক করছি বিয়ের জন্য তৈরি

লিণ্টু হা/না কিছু না বলে চলে যায় এদিকে আহেদ খোঁজ-খবর নিয়ে এক মুচির মেয়েকে পছন্দ করে ফেললো কয়েক দফা দর কষাকষির পর ঠিক হলো, মুচি তার মেয়েকে লিণ্টুর সঙ্গে বিয়ে দেবে, আর যৌতুক হিসেবে নগদ দশ হাজার টাকা দেবে

সব ঠিক লিণ্টুও রাজী তারপর এক রাতে আত্মীয়-স্বজন কাউকে না জানিয়ে বিয়ের কাজটা সেরে ফেলা হলো আহেদ কড়কড়ে ১০ হাজার টাকা হাতে পেলো আর লিণ্টুও কিশোর বয়সী তরতাজা মেয়ে হাতে পেয়ে দারুণ খুঁশী

কিন্তু দিন দুয়েক না যেতেই শুরু হয়ে গেল সংকট আহেদের অভিযোগ, ছেলের বউ নামাজ-কালাম পড়ে না, শ্বশুর-শ্বাশুরিকে মান্য করে না সংসার কাকে বলে তাও জানে না আর লিণ্টুর অভিযোগ হলো, এই মেয়ে অযোগ্য অন্য কারও সঙ্গে প্রেম আছে যখন-তখন সেই প্রেমিক এসে ওকে তুলে নিয়ে যায়

আরও কদিন যেতে না যেতেই পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিলো লিণ্টু বউকে তালাক দিতে চায় আর বউও ওরসঙ্গে থাকতে চায় না শেষ পর্যন্ত অবস্থা আরও খারাপ হলো বউকে শ্বশুর বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে আত্মগোপনে চলে গেল লিণ্টু শ্বশুর মামলা-মোকদ্দমার জন্য নেমে পড়লো যৌতুকের নগদ ১০ হাজার টাকা ফেরত চাইলো বিপদ বুঝে আহেদ আলী ঘোষণা দিয়ে দিলো, সে লিণ্টুকে ত্যাজ্য পুত্র করেছে তার সঙ্গে আহেদের কোন সম্পর্ক নেই যৌতুক সম্পর্কেও সে দায়ী নয় টাকা লিণ্টুর কাছ থেকে নিতে হবে

এই নিয়ে বেশ কয়েক সপ্তাহ দৌড়-ঝাপ চললো লিণ্টু পালিয়ে রইলো এক পর্যায়ে গরীব মুচি যখন বুঝতে পারলো, কোন ভয় দেখিয়ে কাজ হবে না, মামলা-মোকদ্দমায় যাওয়া সাধ্যও তার নেই তখন সে হাল ছেড়ে দিয়ে মেয়েকে অন্য কোথাও বিয়ের জন্য চিন্তা করলো আহেদ আলী ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে দারুণ তৃপ্তিতে হাত বুলাতে থাকলো দাড়িতে লিণ্টুকে ভাগিয়ে রাখতে পেরেও স্বস্তি পেল

 

-------- চলবে ---------

শনিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

গল্প : ধারাবাহিক [পর্ব-বারো] শেকড়ের ডানা

 

শেকড়ের ডানা

ইয়াসমিন হোসেন

আহেদ আলী চেয়ারে বসে হাতে তসবিহ্ একটা একটা করে হিসাব গুনছিল সময় নিয়ে দানাগুলো ছাড়ছিল এমনিতে অনেক বয়স হয়ে গেছে আগেরমত শরীর চলে না উঠে দাঁড়াতেও কষ্ট হয় দাঁড়ানো থেকে বসাও কষ্ট মনে হয়- এই বুঝি হুরমুড়িয়ে পড়বে তারপর সব হাড়গোড় ছিটিয়ে যাবে চলতে ফিরতে খুব সমস্যা তাই একটা লাঠি ভড় দিতে হয়

আহেদ হিসাব মেলাচ্ছিল লাভ-ক্ষতির হিসাব কিন্তু ফলাফলটা পরিস্কার হচ্ছে না শূন্য অবস্থা থেকে সে অনেক কিছু করেছে ঘর-বাড়ি আগের চেয়ে অনেকটাই ভাল করেছে মেয়েগুলোর বিয়ে দিয়েছে সঙ্গে নগদ টাকা-পয়সা-জমিও দিয়েছে যেমন বড় মেয়েকে নগদে এক লাখ টাকা দিয়েছে দ্বিতীয়জনকে বসতবাড়ির দুই শতাংশ জমি, তার স্বামীকে আরও দুই শতাংশ জমি দিয়েছে তৃতীয়জনকে  নগদ টাকায় ৩৬ শতাংশ জমি কিনে দিয়েছে চতুর্থজনকে দিয়েছে নগদ দুই লাখ টাকা পঞ্চমজনকে নগদ টাকায় দুই কাঠা জমি কিনে দিয়েছে এছাড়াও বিভিন্ন সময় তাদের নগদ টাকাসহ নানান কিছু দিয়ে চলেছে

আহেদ যখন এই হিসাব গুনে তৃপ্তির নিঃশ্বাস ছাড়তে যাচ্ছিল, তখন ভেতর থেকে আরেক আহেদ প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো-

-        অ্যাই ব্যাটা আহেদ আলী, গপ্প মারার জায়গা পাস্ না? তোর এতো টাকা এলো কোত্থেকে? তুই তো টাকা আয় করিসনি অসৎ উপায়ে টাকা হাতিয়েছিস এসব পাপের টাকা পাপ করে তুই বগল বাজাতে চাস্?

একটু হকচকিয়ে গেল আহেদ ঢোক গিললো তসবিহ্র দানা আটকে গেল তারপর দ্রুত সামলে নিলো নিজেকে মিনমিন করে বললো-

-        পাপ করেছি, খেশারতও দিয়েছি নামাজ পড়েছি, জাকাত দিয়েছি মাদ্রাসার জন্য মোটা টাকা আর জমি কিনে দিয়েছি এতিমদের এবাদতের জন্যও মোটা অংকে জায়গা কিনে দান করেছি বসতবাড়ির দুই শতাংশ জায়গা পর্যন্ত দান করেছি এখন শরীর দুর্বল, তাই পাঁচ ওয়াক্তো নামাজ পড়তে পারি না ঠিক, কিন্তু এবাদত তো করি এর কি কোন পূণ্য নেই?

ভেতরের আহেদ হি হি করে হাসলো তারপর বললো-

-        ব্যাটা জোচ্চর, পাপ করিস্ আর নামাজ পড়িস্ তুই তো একটা ভন্ড ভন্ডামি করে আল্লাহর সঙ্গে প্রতারণা করিস্ নামাজ পড়লেই পাপ চলে যায় না তুই পাপ করিস্, আর নামাজ পরিস্ নামাজ হয় না, তোর পাপও যায় না তুই সবার সঙ্গে প্রতারণা করে এতোদূর এসেছিস ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে প্রতারণা করেছিস, স্ত্রীর সঙ্গে প্রতারণা করেছিস, গোটা পরিবারের সঙ্গে প্রতারণা করেছিস, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে প্রতারণা করেছিস, সমাজের সঙ্গে প্রতারণা করেছিস, দেশের সঙ্গে প্রতারণা করেছিস খোদ আল্লাহর সঙ্গেও তুই প্রতারণা করছিস তোর মত মহাপাপী আর নেই

আবার খানিকটা চুপসে গেল আহেদ তারপর একটু ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো বললো-

-        বেশ করেছি যা করেছি ঠিক করেছি এসব না করলে কি টিকতো পারতাম?- আবার হাসলো নেপথ্যের আহেদ বললো-

-        তুই- তো আসল নাস্তিক পাপ, আল্লাহ- এসব বিশ্বাস করলে কি তুই কখনও অপকর্ম করতিস্? করতিস্ না

আরও ক্ষিপ্ত হলো আহেদ বললো-

-        বিশ্বাস নিয়ে তুই বলার কে রে? বিশ্বাস করে চলতে গেলে মরে ভুত হয়ে যেতে হতো কোন্ ব্যাটা আছে যে বুকে হাত দিয়ে বলতে পারে- পাপ করে আর নামাজ পড়ে না পাপের জন্যই তো নামাজ পাপ না করলে নামাজের কি দরকার আছে? নাই আমি পাপ করি, তাই নামাজ পড়ি ৯৮ জনই তাই করে তাই বলে কি নিজেদের কেউ নাস্তিক মনে করে? করে না বরং আমরা তাদেরই নাস্তিক বলি- যারা আমাদের বিরোধিতা করে, যারা আমাদের ভন্ড বলে- তারাই নাস্তিক

-        হুঁ, গোমড় ফাক করে দিলেই নাস্তিক! এই জন্যই তো তুই তোর বড় ছেলেকে নাস্তিক বলিস কিন্তু আসল নাস্তিক তো তুই

তারপর অনেকক্ষণ কথা নেই আহেদও চুপ, নেপথ্যও চুপ নিজেকে একটু ঝাড়া দিলো আহেদ বাজে চিন্তাগুলো ঝেড়ে ফেলে দিতে চাইলো তারপর আবার তসবিহ্ টিপতে শুরু করলো ভাবলো, সত্যিই কি সে পাপী নাহ্ সে যদি পাপী হয়, তাহলে তাবৎ মোল্লা-মুসুল্লিদের বেশিরভাগই পাপী কারণ তারা এমন করেই চলে তাদের যদি অন্য গুন থাকতো- তাহলে তারা মোল্লাগিরি করতো না মোল্লাগিরি না করলে তারা ভাত-কাপড়ে মরতো মরতো, আর ভুত হয়ে যেতো নবিজি এই একটা পথটা দেখিয়ে দিয়েছেন বলেই না ধর্মটা আছে নাহলে ধর্ম থাকতো না ধর্ম আছে বলেই এর মহাত্ম আছে মহাত্ম মানে ব্যবসা আছে, আয়-রোজগার আর বেঁচে থাকা আছে তাই এইভাবে আয়-রোজগারে পাপ নাই পাপ নিয়ে চলতে গেলে বাঁচার পথ নাই ধ্বংস, ধ্বংস অনিবার্য আমি ধ্বংস চাইনি, চাই না তাই পাপ হোক, আর অন্য যাই হোক- যা করা উচিৎ তাই করেছি এরজন্য শাস্তি হলে খোদাই দায়ি কেন তিনি আমাদের অন্য পথ করে দেননি? কেন তিনি ভন্ডামি পথের সুযোগ দিয়ে রেখেছেন? রেখেছেন বলেই- করি এরজন্য শাস্তি হলে আমার একার হবে না, তাবৎ মৌলভি আর মোল্লাদের শাস্তি হবে ওই যে একটা গান আছে না-

এই যে দুনিয়া কিসের লাগিয়া

এত যত্নে গড়াইয়াছেন সাঁই

ছায়া বাজী পুতুল রূপে বানাইয়া মানুষ

যেমনি নাচাও তেমনি নাচি পুতুলের কি দোষ?

যেমনি নাচাও তেমনি নাচি....

তুমি খাওয়াইলে আমি খাই আল্লাহ

তুমি বেস্ত তুমি দোজখ তুমি ভাল মন্দ

তুমি ফুল তুমি ফল তুমি তাতে গন্ধ

আমার মনে এই আনন্দ

কেবল আল্লাহ তোমায় চাই আমি....

তুমি হাকিম হইয়া হুকুম কর পুলিশ হইয়া ধর

সর্প হইয়া দংশন কর ওঝা হইয়া ঝাড়

তুমি বাঁচাও তুমি মার

তুমি বীনে কেহ নাই আল্লাহ, তুমি বীনে কেহ নাই

তাই আমি পাপের ভয় করি না হুকুমদার যেমন করায়, তেমন করি আমার কোন দোষ নাই সব দায় তার....

 

-------- চলবে -------

ঢাকা থেকে মালদ্বীপ ভ্রমণ- ৩ [Dhaka to Maldives Travel-3]

  ঢাকা থেকে মালদ্বীপ ভ্রমণ - ৩ [Dhaka to Maldives Travel-3] ঢাকা থেকে মালদ্বীপ ভ্রমণ- ৩ [Dhaka to Maldives Travel-3] : কোথাও নীল কোথাও স...