দার্জিলিং ভ্রমণ (পর্ব : এগারো) লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
দার্জিলিং ভ্রমণ (পর্ব : এগারো) লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

শনিবার, ২৪ জুলাই, ২০২১

দার্জিলিং ভ্রমণ (পর্ব : এগারো)


 

দার্জিলিং ভ্রমণ (পর্ব : এগারো)

ইয়াসমিন হোসেন

মূল দার্জিলিং শহরে ঢুকতেই বেজে গেল ২টা মতো সেখান থেকে গাড়ি ছুটে চলেছে বেশ দূরের পথে মনি গাড়ি দাঁড় করালেন Zoo বা চিড়িয়াখানার কাছে রাস্তার ডানে পাহাড়ের উপরে চিড়িয়াখানা বিশাল এলাকা জুড়ে এর আয়তন শুনে না করে দিলাম বললাম চিড়িয়াখানা দেখবো না, কী- বা থাকবে তাতে! সব দেশের চিড়িয়াখানা একই! পশুপাখির সমাহার দেখার জন্য আর এতো হাঁটতে পারবো না মনি খুব করে বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন কিন্তু আমাদের পেট ক্ষুধায় চোঁ চোঁ করছিল মোটেও খাঁড়া সিঁড়ি বরাবর উঠানামার ইচ্ছে হচ্ছিল না অগত্যা মনি গাড়ি সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে চললেন

তিনি কিছু দূর এসে বললেন, বাম পাশের স্থানটি তেনজিং রক (Tenzing Rook) বললাম, দেখবো না মনি বললেন, তাহলে বিকেলে এসে দেখবেন, পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় এবং দর্শনীয় জায়গা এটি আরও কিছুদূর আসার পর দেখলাম মাথার উপর দিয়ে চলছে Rope মনি বলছিল, এটাতে উঠতে পারেন, দার্জিলিংয়ের অনেক নতুন জায়গা দেখতে পাবেন বললাম, এটা ফেরার পথে দেখবো কারণ হাতঘড়িতে আড়াইটা বেজে গেছে কোথাও কোন খাবার জায়গা দেখতে না পেয়ে অস্থির হয়ে উঠছিলাম

মনি আমাদের নিয়ে গেলেন বেশ কিছু দূরের চা বাগানে (Tea Garden) রাস্তার বাম পাশেই বাগান প্রবেশ পথে চা বিক্রির ছোট ছোট অনেক দোকান ভেতরে ঢুকে মাইলের পর মাইল পাহাড় জুড়ে চা বাগান দেখে আর এগুতে ইচ্ছে হলো না কারণ এই বাগান অল্প সময়ে দেখার নয় এজন্য সারাটা দিন প্রয়োজন আমরা কিছুটা এগিয়ে উঁচু পাহাড় থেকে নিচে এবং আশপাশের দৃশ্যের সামনে দাঁড়িয়ে কয়েকটি ছবি তুলেই ফিরে এলাম

চায়ের দোকানে চা বানিয়ে বিক্রিও হচ্ছিল বেশ ভিড় নানা জায়গা থেকে পর্যটকরা এসেছেন আমরা মনিকে সঙ্গে করে চা পান করলাম দেশে নিয়ে যাবার জন্য চা কিনলাম এইসব দোকানেই বাগানের চা থেকে প্যাকেট তৈরি করা হচ্ছিল আড়াইশ গ্রাম প্যাকেটের দাম ৩৫ টাকা এবং ৫শ গ্রামের দাম ৬০ টাকা বিক্রেতারা হিন্দিতে জানালো, এই চায়ের মধ্যে তিন রকম চা আছে গ্রিন টি, নরমাল টি এবং ব্লাক টি আমরা অতোসতো বুঝলাম না প্রয়োজন অনুযায়ী নিয়ে নিলাম আর ভাবতে লাগলাম, এতোগুলো প্যাকেট নিয়ে সীমান্ত পার হতে দেবে তো?

ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলাম বেলা ৩টা পার হয়ে গেছে সঙ্গে সঙ্গে ক্ষুধার্ত পেট আর্তনাদ করে উঠলো গাড়িতে উঠেই মনিকে বললাম- আর কোথাও নয়, হোটেলে চলুন জবাবে তিনি বললেন- তাহলে একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার বের হবেন? সঙ্গে সঙ্গে নাকচ করে দিলাম বললাম- আর কোথাও না হোটেলে পৌঁছে দেবেন, আপনার কাজ শেষ আর কোথাও বেড়াতে বের হবো না

এমনটা বলার আরেকটা কারণ ছিল সেটা হলোÑ আমার কিছু মার্কেটিংয়ের ব্যাপার রয়েছে সেটার জন্য সময় প্রয়োজন তাছাড়া বিকেল হলেই প্রচন্ড ঠান্ডা গ্রাস করবে তখন আর বেরুতে পারবো না এই হিসেবে হাতে একেবারেই সময় নেই তাছাড়াও কাজ রয়েছে যেমন হাতে টাকা নেই, ডলার ভাঙাতে হবে এটা ভাঙানোর জায়গা চিনি না, খুঁজে বের করতে সময় লাগবে যেহেতু আগামীকাল সকাল সকাল শিলিগুড়ি রওনা হবোÑ সেহেতু হাতে এক চুল পরিমাণ সময় নেই একইসঙ্গে আবার ভেবে রেখেছি, বিকেল বেলা চারামাথা নামক স্থানে গিয়ে সূর্যাস্ত দেখবো সুতরাং ভাবাভাবির কোন পথই খোলা ছিল না

এরপরেও Rope Way-এর কাছে এসে মনি গাড়ি ব্রেক করলেন তিনি নানাভাবে প্রভাবিত করতে লাগলেনÑ এটায় না ঘুরলে ভুল করবেন অগত্যা দ্রæ গাড়ি থেকে নেমে খাঁড়া নাক বরাবর সিঁড়ি বেয়ে তিন তলা সমান উঁচুতে উঠে Rope Way-এর টিকেট কাটলাম দেড়শ টাকা করে মূল্য আগে কখনও চড়া হয়নি Rope- সুতরাং সুযোগটা হাতছাড়া করা ঠিক হবে না বেশ অনেকগুলো Rope আসা-যাওয়া করছিল লাইনে দাঁড়িয়ে একটায় উঠে পড়লাম Rope ছুটলো উঁচু পাহাড় থেকে নিচু ভূমির দিকে খুব ধীরে চলছিল এই চলার পথে দেখতে পাচ্ছিলাম পাহাড়ি জনপদের নানা দৃশ্য পাহাড় জুড়ে শুধু বসতিই গড়ে তোলা হয়নি, গড়ে তোলা হয়েছে ক্ষেত-খামার-চায়ের বাগান কোথাও কোথাও জনপদের কোন চিহ্নই নেই তবে চলার ট্রেইল বা পায়ে হাটা পথ দেখে বোঝা যাচ্ছিল এই খাঁড়া পাহাড়ের দেয়াল বেয়ে অনবরত মানুষ চলাফেরা করেন এক পর্যায়ে জড়ঢ়ব বিরক্তিতে ভড়িয়ে দিলো কারণ যাত্রা শেষই হচ্ছে না আবার ফেরত তো আসতে হবে! -টা বাজবে তাহলে? ভেবে অস্থির হয়ে উঠছিলাম পুরো আধ ঘণ্টা চলার পর একেবারে নিচের ভূ-খন্ডে আরেক Rope Way Station- এসে থামলো ওযেটাররা বললো, এখানে ঘোরাঘুরি করবো কিনা? জবাবে সবাই একবাক্যে-না করে দিলেন মোট জন ছিলাম Rope- সবাই এতো বিলম্ব করে চলার জন্য বিরক্ত হয়ে উঠেছিলেন বলছিলেনও, এতো সময় নিয়ে যাত্রা ভাল লাগে না অল্প সময়ের যাত্রা হলে মজা থাকে আমরা আপত্তি জানাতেই Rope ফিরতি পথ ধরলো আবার আধা ঘণ্টার ফ্যাঁকরা

পথে মনি আরওসব জায়গা ঘোরানোর জন্য চেষ্টা করছিল আমরা রাজী না হওয়ায় প্রায় সাড়ে ৪টার দিকে হোটেলে পৌঁছুলাম দ্রæ ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার গো-গ্রাসে গিলে দুজন বেরিয়ে পড়লাম প্রথমে মানি এক্সচেঞ্চার খুঁজে বের করে ডলার ভাঙিয়ে ছুটলাম শপিংয়ের জন্য তারপর কিছু সময়ের জন্য হোটেলে এসে সব পাওনা টাকা মিটিয়ে নিশ্চিন্ত হলাম

 

------- চলবে -------

ঢাকা থেকে মালদ্বীপ ভ্রমণ- ৩ [Dhaka to Maldives Travel-3]

  ঢাকা থেকে মালদ্বীপ ভ্রমণ - ৩ [Dhaka to Maldives Travel-3] ঢাকা থেকে মালদ্বীপ ভ্রমণ- ৩ [Dhaka to Maldives Travel-3] : কোথাও নীল কোথাও স...