ঘুরে এলাম শান্তি নিকেতন লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
ঘুরে এলাম শান্তি নিকেতন লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

বৃহস্পতিবার, ৮ এপ্রিল, ২০২১

ঘুরে এলাম শান্তি নিকেতন

ঘুরে এলাম শান্তি নিকেতন

-       ইয়াসমিন হোসেন

 




















ভারতের কলকাতা থেকে দিনে দিনে ঘুরে আসা যায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তি নিকেতন। তবে তারজন্য চাই বেশ সকাল সকাল রওনা হওয়া। ট্রেনে এমনিতে তিন ঘণ্টার পথ। শিয়ালদহ কিংবা হাওড়া স্টেশন থেকে উঠতে হয়। এই ট্রেন কলকাতা থেকে বর্ধমান হয়ে বোলপুর নামিয়ে দেয়। সেখান থেকে রিকশা, ভ্যান কিংবা সিএনজি ট্যাক্সি/স্কুটারে যেতে হয় শান্তি নিকেতন।

বেশ আগের কথা। আমরা দলে ছিলাম চারজন। আমি, আমার স্বামী আবুল হোসেন খোকন, ঢাকার ইউরোপীয়ান স্ট্যন্ডার্ড স্কুলের শরীরচর্চা শিক্ষক স্বামী-স্ত্রী সরোয়ার রাকিব রুবেল সেরাজুম মুনিরা বেগম। কলকাতা বেড়াতে গিয়ে এই শিক্ষক দম্পতির সঙ্গে পরিচয়, তারপর রীতিমতো আন্তরিকতা। এই দম্পতি অবশ্য পুরো দস্তর টুরিস্ট। ঘুরে এসেছেন হীমাচল প্রদেশের মানালী। কলকাতার পর যাবেন দার্জিলিং। যখনকার কথা বলছিÑ সেটা ছিল এই ২০১৪ সালের জুলাই মাসের মাঝামাঝি।

আমরা দুই জোড়া দম্পতি ভোর বেলায় উঠে কলকাতার নিউ মার্কেটের পাশ থেকে বাসে চড়ে সোজা গিয়ে নেমেছিলাম শিয়ালদহ রেল স্টেশনে। ভোর ৬টায় বেরিয়েছিলাম। স্টেশনে পৌছুতে আধা ঘণ্টা লেগেছিল। এরপর টিকেট কাটার পালা। জনপ্রতি ভাড়া ৭০ টাকা। বিরাট লম্বা লাইন। টিকেট পেতেই ঝক্কি পোহাতে হয়েছিল। আপ-ডাউন টিকেট চাওয়ার পর কাউন্টার থেকে দেওয়া হয়েছিল চারজনের ডবল করে ডবল দামে টিকেট। তাৎক্ষণিকভাবে সেটা আমরা কেউ বুঝিনি। পথে গিয়ে জানলাম, আমাদের আপ-ডাউন টিকেট না দিয়ে চারজনে ডবল, অর্থাৎ ৮টার দাম রেখে দেওয়া হয়েছে। আর ট্রেনে বসার সিট! দাঁড়াবার জায়গা পর্যন্ত নেই। সিট খুঁজবার মতো কোন সুযোগ নেই। তাই সিট খোঁজা বাদ দিয়ে আমাদের ঠাঁসাঠাঁসি রেলে কোন রকমে দাঁড়িয়ে যেতে হয়েছিল। অবশ্য মাঝ পথে গিয়ে সিট মিলেছিল, যা আমাদের টিকেটের নাম্বার অনুযায়ী নয়। আমরা আমাদের নির্ধারিত কামরায় উঠতে পারিনি। এই ভোর বেলা এতো গাদাগাদি-ঠাঁসাঠাঁসি অবস্থা কেন হয়, তাও আবার কোলকাতার পথে নয়, কোলকাতা থেকে বেরিয়ে যাবার পথে- এর সন্তোসজনক জবাব বের করতে পারিনি।

কলকাতা-বোলপুরের দূরত্ব প্রায় ১৮২ কিলোমিটার। আমাদের পৌঁছুতে পৌঁছুতে বেলা ১১টা মতো বেজে গেল। ডবল ভাড়া নেওয়ায় বড্ড ক্ষেপে গিয়েছিলেন আমাদের রুবেল ভাই। তিনি বললেন, ‘আগে এর একটা বিহীত করি।ছুটলেন স্টেশন মাস্টারের কাছে। খুঁজে খুঁজে রুম বের করা হলো। স্টেশন মাস্টারকে পরিচয় দিয়ে টিকেট দেখানো হলো। তিনি বেশ চিন্তিতভাবে বললেন, ‘অন্যায় কাজ করা হয়েছে, কিন্তু আমাদের বিশেষ কিছু করার নেই। আমরা আপনাদের অভিযোগ ইন্টারনেটে এক্ষুণি শিয়ালদহ স্টেশন মাস্টারের কাছে পাঠিয়ে দেবো। তিনি তদন্ত করবেন। এতে বেশ সময় লাগবে। তারপর আপনাদের অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার পর রেল কর্তৃপক্ষ আপনাদেরকে একটা চিঠি দেবে, যাতে ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করা হবে। এর বেশি কিছু নয়। কোন ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নেই।রুবেল ভাই হতাশ হয়ে বললেন, ‘তাহলে?’ স্টেশন মাস্টার বললেন, ‘যেহেতু ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নেই সেহেতু আপনারা অভিযোগ করলেন, এটাই যথেষ্ট। আমরা আমাদের মতো দেখতে থাকি। আর ঘটনার জন্য আমি নিজেই আপনাদের কাছে কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আপনাদের ভ্রমণ শুভ হোক।

স্টেশন মাস্টারের রুম থেকে বেরিয়ে আমরা সিএনজি স্টেশনে এলাম। অনেক স্কুটার ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে। আমরা একটায় ভাড়া জনপ্রতি ১০টাকা করে মিটিয়ে উঠে পড়লাম।

ভারতের রাস্তাঘাটগুলোতে ছেলে-মেয়ে-যুবক-যুবতীর অনেকেই বাইসাইকেল চালিয়ে যাতায়াত করেন। বোলপুর থেকে শান্তি নিকেতন যেতেও সেই চিত্র। বহু কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী সাইকেল চালিয়ে যাতায়াত করছেন। রাস্তার ধারের দোকান-পাটগুলো আমাদের দেশ বাংলাদেশের অলিগলি পথের মতোই। পথের ধারে হকারদের দোকানপাট। তাতে হরেকরকম পণ্যের সমাহার। এছাড়া অন্য দোকানগুলোও আমাদের দেশের সাধারণ দোকানপাটের মতো। শান্তি নিকেতন পৌঁছে ফুটপাতের দোকানগুলোতে দেখলাম মাটির তৈরি রবি ঠাকুরের নানান প্রতিকৃতি। দাম ১০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। আরও আছে কারুকার্যময় তৈজষপত্রের ছড়াছড়ি।

সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে সামান্য হেঁটে শান্তি নিকেতনের রবীন্দ্র ভবনে যেতে হয়। জনপ্রতি টিকেট ২০ টাকা করে। তবে এই নিয়মটি হয়েছে অতি ¤প্রতি। আগে টিকেট কাটার নিয়ম ছিল না। দর্শনার্থীরা বিনা পয়সায় ভেতরে ঢুকতে পারতেন। এখন টিকেট সিস্টেম হওয়ার পরেও আরেক সমস্যা। ইন্ডিয়ানদের জন্য টিকেটের দাম ২০ টাকা হলেও বিদেশিদের জন্য ১০০ টাকা।

রবীন্দ্র ভবনে ঢুকতেও জারি হয়েছে বিধি-নিষেধ। ছবি তোলা যাবে না, ক্যামেরা নেওয়া যাবে না। ক্যামেরা কাউন্টারে জমা রেখে যেতে হবে। আর মোবাইল সেট বন্ধ করে রাখতে হবে। অর্থাৎ কোনভাবেই ভেতরের ছবি সংগ্রহ করা যাবে না। বাধ্য হয়ে আমরা ক্যামেরা জমা দিলাম। মোবাইল সেট বন্ধ করে ভেতরে ঢুকে পড়লাম বটে, সুযোগ বুঝে সেট চালুও করেছিলাম। কারণ স্মৃতি/তথ্য ধরে রাখতে পারবো না- তা কি হয়!

স্কুটার থেকে নেমে কিছুটা হেঁটে আসার পর হাতের ডানে পড়ে এই রবীন্দ্র ভবন, আর বামে বিশাল এলাকা জুড়ে শান্তি নিকেতন, যেখানে দেশ-বিদেশ থেকে ছেলে-মেয়েরা লেখা-পড়া করতে আসেন। তাদের জন্য আছে আবাসিক ব্যবস্থাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার মতো সব রকম ব্যবস্থা। রবীন্দ্র ভবন আর শান্তি নিকেতনের মাঝখানে প্রকৃতিক শোভা সমৃদ্ধ, অর্থাৎ গাছপালায় সুশোভিত জায়গার ভেতর দিয়ে যাতায়াতের পাকা রাস্তা। সেই রাস্তায় চলছে রিকশা, সাইকেল, জিপ, ট্যাক্সি। তবে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকায় জ্যাম লেগে যাওয়ার অবস্থা নেই। গরমের দিন না হয়ে শীতের দিন হলে এই এলাকা যে সত্যিই প্রাকৃতিক শান্তির এলাকা- তা এমনিতেই বোঝা যায়।

আমরা রবীন্দ্র ভবনের ভেতর ঢুকেই প্রথম যে ভবনটা পেলাম সেটা বেশ ছিমছাম, ফাঁকা জায়গায় পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হলুদাভ দ্বিতল ভবন। যদিও বাইরে থেকে দ্বিতল বোঝা যায় না। মূলত এই ভবনেই রয়েছে রবি ঠাকুরের ব্যবহৃত সমস্ত কিছুর সম্ভার। কাঁচের গেট পেরুনোর আগে আরেক দফা ডিটেকটর যন্ত্রে সার্চ করা হয়। ভেতরে ঢোকার পর রুমে রুমে সাজানো রবি সম্ভার। কী নেই সেখানে! জীবন-যাপনের টুকিটাকি থেকে শুরু করে দীর্ঘ জীবনের যতো স্মৃতি তার সবই সংরক্ষিত এই ভবনে। কাঁচের  শোকেসে রাখা এসব জিনিসপত্রের প্রত্যেকটির সঙ্গে বাংলা, ইংরেজি এবং হিন্দিতে লেখা পরিচিতি। শোকেসের বাইরে দেওয়ালগুলোতে রাখা বিশাল বিশাল তৈলচিত্র, যেগুলো রবীন্দ্রণাথের আঁকা। আরও আছে দেশ ভ্রমণের নানা আলোকচিত্র। সবই বড় বড় করে কাঁচের ফ্রেমে বাঁধানো। বই এবং গানের স্বরলিপির ভান্ডারেই ভর্তি একটি বিরাট রুম। রয়েছে রবি ঠাকুরের ব্যবহৃত কলম, চশমা, স্যান্ডেল-জুতো-খড়ম, শেভিং ব্লেড-রেজার, বদনা, জামা-কাপড়-সুঁচ-সুঁতো, চা তৈরির সরঞ্জাম, নৌকা-বজরা, যে ট্রেন এবং জিপে চড়তেন তার অবিকল প্রতিকৃতি, উপহার পাওয়া সামগ্রী ইত্যাদি। সব মিলে উপরে-নিচে মিলিয়ে অফুরন্ত ভান্ডার। পুরো দিনেও এসব দেখে শেষ করার নয়।

এই ভবন ছাড়াও গোটা চত্তরে আরও অনেক ভবন রয়েছে। এর কোনটা রবি ঠাকুরের বসবাসের ভবন, কোনটা অবসর কাটানোর ভবন, কোনটা বিদেশি অতিথিদের নিয়ে আড্ডার ভবন, রয়েছে মহাত্মা গান্ধির থাকার জন্য তৈরি করা আলাদা ভবন। আরও রয়েছে জলসা ঘর, আলোচনা সভার ঘর, গাড়িসহ গ্যারেজ, উদীচী নামে ভবন। যে ভবনে রবি ঠাকুরের শেষ দিন কেটেছিল সে ভবনও রয়েছে বিশেষ মর্যাদায়। চত্তরটা যে অনেক বিশাল- তা অবশ্য বাইরে থেকে বোঝা যায় না। চত্তর জুড়ে আছে গাছ-গাছালিসহ প্রাকৃতিক শোভা। তারই ফাঁকা ফাঁকা জায়গায় রবি ঠাকুরের নানা স্মৃতি। এই চত্তর বেড়াতেও গোটা দিন লাগার মতো।

শান্তি নিকেতন

উপনিবেশিক প্রবর্তিত প্রচলিত শিক্ষার বিপরীতে নতুন শিক্ষা পদ্ধতি চালু করার কথা বিবেচনা করেই নিজ উদ্যোগে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯০১ সালে এই বোলপুরে প্রতিষ্ঠা করেছিলেনশান্তি নিকেতন প্রসঙ্গে কবি নিজেই বলেছিলেন, ‘আমার একান্ত ইচ্ছা ছিল যে এখানকার এই প্রভাতের আলো, শ্যামল প্রান্তর, গাছপালা যেন শিশুদের চিত্ত স্পর্শ করতে পারে। কারণ প্রকৃতি সাহচর্যে তরুণ চিত্তে আনন্দ সঞ্চারের দরকার আছে। এই উদ্দেশ্যে আমি আকাশ আলোর অন্তশায়ী উদাস প্রান্তরে এই শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করেছিলুম।

এই শান্তি নিকেতনে প্রাচীন ভারতীয় আশ্রমিক শিক্ষার ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি স্থাপন করেছিলেন শান্তি নিকেতন বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর প্রাচীন প্রতিচ্য জ্ঞান অর্জন এবং বিশ্বাত্ম চেতনার লক্ষ্যে ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠা করেন বিশ্বভারতী। ফলে এখানে গড়ে উঠেছে জ্ঞানার্জনের মহা আয়োজন।

রবীন্দ্র ভবনের বিপরীত এলাকা জুড়ে গড়ে উঠা এই মহাক্ষেত্রের চত্তরে রয়েছে রবি ঠাকুরের নানা নিদর্শন। রয়েছে শৈল্পিক কীর্তি। আরও আছে রবীন্দ্রনাথের তথ্য প্রামাণ্য তথ্য ভবন।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেল, দেশি-বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্বভারতীর অন্তর্ভূক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে শিশু ভবন (নার্সারি স্কুল), পাঠ ভবন (মাধ্যমিক বিদ্যালয়), শিক্ষা ভবন (উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়), বিদ্যা ভবন (স্নাতক স্নাতকোত্তর), বিনয় ভবন (শিক্ষক প্রশিক্ষণ), কলা ভবন (শিক্ষা চারুকলা), সঙ্গীত ভবন (সঙ্গীত নৃত্য), শ্রী নিকেতন (পল্লী উন্নয়ন), শিক্ষামন্ত্র (গ্রাম বিদ্যালয়), শিক্ষা সদন (শিক্ষা শিক্ষণ), চীনা ভবন (চীনা, তিব্বতি ইত্যাদি ভাষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান) যা থেকে প্রসারিত বিজ্ঞান চেতনায় আধুনিক শিক্ষা। শান্তি নিকেতনে শিক্ষার বৈশিষ্ট হলো, এখানে জাতি-ধর্মের পার্থক্য নেই, ছেলে-মেয়েরা একসঙ্গে লেখাপড়া করে, একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া-খেলাধুলা করে, উচ্চ-উন্নত চিন্তা সরল জীবন-যাপন করে। শিক্ষার্থীরা নিজেদের কাজ যেমনÑঘরবাড়ি পরিস্কার, বাগান পরিচর্যা, পোশাক-পরিচ্ছদ পরিস্কার, বাসনপত্র ধোয়ার মতো কাজগুলো নিজেরাই করে। শিক্ষার্থীরা শান্তি নিকেতনে নিজের বাড়ির পরিবেশে বসবাস করে। ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক এখানে মধুর। কখনও শৃঙ্খলাভঙ্গ বা অনাকাক্সিক্ষত কোন ঘটনা ঘটে না।

শান্তি নিকেতনে মহাশান্তির আরেকটি জায়গা রয়েছে। সেটাকে কেউঘুম ঘরকেউমেডিটেশন ঘরবলে থাকেন। কারণ এখানে সুরের মুর্ছনায় এমন সব শিক্ষা এবং মানসিক ব্যায়াম করানো হয়- যার ফলে অনেকেই অনেক সময় গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটিয়ে থাকেন। এখানে নিয়মিত মেডিটেশন করানো হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা প্রতিভার দিক থেকে মেধাবী এবং উন্নত চেতনার অধিকারী হয়ে উঠে।

আমরা অবশ্য এই ঘরে ঢোকার সুযোগ পাইনি। কারণ এটি বিকেলে এবং ভোর বেলা খোলা হয়। আমরা শান্তি নিকেতন দর্শনে হাজির হয়েছিলাম দুপুর বেলায়। আমাদের বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষার সুযোগ ছিল না, কলকাতায় ফিরবো বলে। সুতরাং কারুকার্যময় স্বেতপাথরসহ বিভিন্ন অলংকরণে সজ্জিত এই ভবনটিকে বাইরে থেকে দেখেই আমাদের সাধ মেটাতে হয়েছিল। 

প্রচন্ড গরমকালের এই ভ্রমণ আমাদের খুব সংক্ষিপ্ত করতে হয়েছিল। শান্তি নিকেতন থেকে বেরিয়ে বিকশা নিয়ে ফের বোলপুর স্টেশনের পথে যাত্রা। ক্ষুধায় পেট চোঁ চোঁ করছিল। স্টেশনে রেলের একটা হোটেল পাওয়া গেল। বেশ কম দামে এখানে খাবারও মিলে গেল। আমারই ছিলাম শেষ খরিদ্দার। কারণ খাবার শেষ হয়ে গেলেও আমাদের পরে আর কোন খরিদ্দার খাবার পাননি।

ট্রেনের টিকেট কেটে আবার অপেক্ষার পালা। বেশ পরে ট্রেন এলো। আমরা উঠে পড়লাম। এবারও প্রচন্ড ভিড়। যাত্রীদের কথা থেকে জানা গেল, বর্ধমান পাওয়ার সময় ট্রেন ফাঁকা হবে, সিটও মিলবে।

এই ট্রেনটি ছিল বেশ ধীর গতির। গাদাগাদি করে যাত্রী থাকায় বসার কোন সুযোগই মিলছিল না। কিছুদূর যাবার পর সিটে বসে থাকা একদল সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপ হলো। এঁদের নেতা ছিলেন তারা টিভির সিনিয়র চেয়ারম্যান রবি দত্ত। সম্মান জানিয়ে তারা সবাই সিট ছেড়ে দিয়ে আমাদের বসতে দিলেন। নিজেরা সবাই দাঁড়িয়ে রইলেন। চা-বিস্কুট কিনে খাওয়ালেন। আতিথেয়তা দারুণ মুগ্ধ করলো।

কলকাতার শিয়ারদহ স্টেশনে পৌঁছুতে আমাদের সন্ধ্যে রাত হয়ে গেল।

 

ছবির ক্যাপশন

.      শান্তি নিকেতনের করবী ছাত্রী নিবাসের সামনে লেখক সহযাত্রী সেরাজুম মুনিরা

.    শান্তি নিকেতনে রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিকর্মের সামনে লেখক

.   শান্তি নিকেতনে আকর্ষণীয় ঘুমঘর 

.    রবীন্দ্র ভবন এলাকার দৃশ্য 

.    রবীন্দ্র ভবনের সংগ্রহশালা 

৬.    রবীন্দ্র ভবনের প্রবেশ পথ 

.    শান্তি নিকেতনের ভেতরের দৃশ্য 

.   রবীন্দ্র ভবন এবং শান্তি নিকেতনের মাঝখানে সড়ক পথের দৃশ্য 

.    শান্তি নিকেতনের প্রবেশ পথ 

১০.  শান্তি নিকেতনের ফুটপাতে রবীন্দ্র প্রতিকৃতি তৈজষপত্রের সমাহার 

১১.   সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে ছেলে-মেয়েরা 

১২.   রাস্তায় ছেলে-মেয়েরা সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে 

১৩.  বোলপুর স্টেশন থেকে শান্তি নিকেতনে যাত্রাপথের দৃশ্য 

১৪.    শান্তি নিকেতনের রবীন্দ্র ভবন

১৫.    শান্তি নিকেতনের ভেতর আরেকটি রবীন্দ্র সংগ্রহশালা

১৬.   রবীন্দ্র ভবনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যবহৃত কক্ষ

ঢাকা থেকে মালদ্বীপ ভ্রমণ- ৩ [Dhaka to Maldives Travel-3]

  ঢাকা থেকে মালদ্বীপ ভ্রমণ - ৩ [Dhaka to Maldives Travel-3] ঢাকা থেকে মালদ্বীপ ভ্রমণ- ৩ [Dhaka to Maldives Travel-3] : কোথাও নীল কোথাও স...