শুক্রবার, ৩০ জুলাই, ২০২১

দার্জিলিং ভ্রমণ (পর্ব : বারো)




 

দার্জিলিং ভ্রমণ (পর্ব : বারো)

ইয়াসমিন হোসেন

আমরা যখন গাড়িতে দার্জিলিংয়ের পথঘাট ঘুরছিলাম তখন কতোগুলো কারণে অবাক হচ্ছিলাম সকালের প্রচন্ড ঠান্ডায় স্কুল-কলেজের টিনএজ মেয়েরা তেমন কোন গরম কাপড় ছাড়াই চলাচল করছিল দেখেছি ফাঁকা রাস্তায় একা একা কিংবা দলে দলে মেয়েরা পায়ে হেঁটে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলেছে, তাদের সঙ্গে কোন অভিভাবক নেই পায়ে হেঁটে চলছেÑ কারণ আগেই বলেছি, এখানে কোন রিকশা-বাইসাইকেল ধরনের যানবাহন নেই মজার ব্যাপার হলো এসব মেয়েরা একেবারেই ছোটখাটো পোশাক পড়া আমাদের দেশে পাজামা পড়ে, কিন্তু এরা ছোট হাফ প্যান্ট পড়ায় গোটা পা পর্যন্ত খোলা আমাদের দেশে টিনএজ মেয়েদের এরকম চলাফেরার কথা কল্পনাও করা যায় না প্রত্যেকের পায়ে কেডস সু

অবাক ব্যাপারÑ আমাদের দেশে এরকম ঠান্ডায় শরীরের রং কালো হয়ে কুচকে যেতো, কিন্তু এখানে তা হয়নি বরং ঠান্ডায় যেন এরা আরও বেশি ফর্সা এবং এদের চেহারা অসাধারণ সুন্দর হয়ে উঠেছে এক নজরেই চোখে পড়ে প্রত্যেকের শরীরের রং উজ্জ্বল টকটকে ফর্সা ছেলেদের চেহারাও একই এরা অবশ্য প্যান্ট-শার্ট পড়ে চলাচল করে আমাদের দেশের মতোই তবে রাস্তাঘাটে কোন অসভ্যতা নেই এখানে ছেলে-মেয়েদের দলে দলে স্কুলে যাওয়া থেকে একটা ধারণা পাওয়া যায়Ñ দার্জিলিংয়ের সবাই লেখাপড়া করে ঘরে বসে আড্ডা দিয়ে, ঘুরে বেরিয়ে বা শিশু শ্রমের কাজ করে এরা চলে না

লক্ষ্য করলাম এখানকার বাসিন্দারা বাঙালির চেহারা থেকে বেশ আলাদা সম্ভবত এরা নেপালী বংশোদ্ভূত ফলে পুরুষদের গায়ের রং আমাদের দেশের মতো হলেও নারীদের সবার রং টকটকে উজ্জ্বল ফর্সা প্রত্যেকের গাল লালাভ, যেন রক্ত জমে আছে প্রথমে ভেবেছিলাম মেকাপ নিয়ে হয়তো এটা করা হয়েছে কিন্তু দেখলাম আসলে তা নয় এখানকার আবহাওয়ার কারণেই এভাবে রক্ত জমে থাকে নিজেও খেয়াল করছিলামÑ ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় হাজার ফুট উপরে থাকার কারণে প্রাকৃতিকভাবে মুখের উপর এক ধরনের চাপ পড়ছে আর এই চাপে গাল গরম গরম মনে হচ্ছে ভাবলাম যদি এক সপ্তাহ থেকে যাই তাহলে আমাদের গালও হয়ে উঠবে লালাভ

‌‌‌‌দার্জিলিংয়ের মেয়েররা ঘরে বসে থাকেন না সবাই কাজ করে তারা বেশ কর্মঠ তা এক নজর দেখেই বোঝা যায় রাস্তায়, দোকানপাট, হোটেল, শপিং মল, পার্ক, বাজারÑ সবখানে মেয়েদেরই প্রাধান্য আসলে দার্জিলিংয়ের বড় অংশই চলে মেয়েদের অংশগ্রহণে এদের একটি প্রধান কাজ হলো পিঠের উপর শীতের কাপড়ের বিরাট লাগেজ চাপিয়ে পর্যটকদের হোটেলে হোটেলে যাওয়া কম্বল, সোয়েটার, গেঞ্জি, টুপি, মাফলার, শাল ইত্যাদি বিক্রি করে এদের জীবিকা আমরা হোটেলে থাকতে কয়েক মিনিট পর পর কতোজন নারী যে দরজায় টোকা দিয়ে­Ñ  কম্বল লিয়েÑ কাপড় লিয়ে বলে বিরক্ত করেছেÑ তার হিসাব নেই ভাবছিলাম, আমাদের দেশে এভাবে অলিতে গলিতে এতো সুন্দর চেহারার তরুণিরা স্বল্প বসনে প্রবেশ করলে কতোজনকে যে ধর্ষণের শিকার হতে হতোÑ ভাবাই যায় না অথচ এখানকার মানুষ এই হীনতা-নিচতা এবং নোংরামী যেন জানেন- না কোথাও কারও দৃষ্টিতে ধরণের কিছু মেলেনা এমন কোন খবরও নেই থাকলে কখনই এতো নির্বিঘেœ যেখানে সখানে এভাবে মেয়েদের চলাচল থাকতো না

ভেবে লজ্জা পাচ্ছিলামÑ আমাদের দেশে কতোই না কূ-ধর্মান্ধতা এবং নোংরা মানসিকতা! কারণেই তো আমরা অধঃপাত থেকে দ্রæ সামনের দিকে এগুতে পারছি না মধ্যযুগীয় চিন্তাধারীদের উন্মাদনায় কেবলই খাবি খাচ্ছি, আর নোংরা মানসিকতা নিয়ে বড় হচ্ছি

দেখলাম এখানকার গৃহবধূ থেকে শুরু করে ২৫-৪০ বছরের মেয়েরা সারাদিন কাজ করেন এসময় তাদের ছেলে-মেয়েরা থাকে স্কুল-কলেজে স্বাভাকিভাবেই প্রশ্ন জাগলো, সারা শহর জুড়ে শুধু মেয়ে আর মেয়েÑ তাহলে পুরুষরা কী করে? হ্যাঁ, লক্ষ্য করে দেখলামÑ পুরুষরা করেন বসে থাকার নানান কাজ যেমন কেও দোকানদারী করছেন, কেও গাড়ি চালাচ্ছেন, কেও ব্যবসা সামলাচ্ছেন, কেও অফিস চালাচ্ছেন অর্থাৎ তারাও কেও ঘরে বসে নেই দৃশ্যমান ছোটাছুটির কাজগুলো করছেন মেয়েরা, আর বাকিসব করছেন পুরুষরা আমার কাছে মনে হলো, এক অনন্য জীবন প্রতিটি মানুষ এখানে সৎভাবে কাজ করেন, আর প্রতিটি ছেলে-মেয়ে সুশিক্ষিত হয়ে বড় হয় এরকম জনগোষ্ঠী উন্নতি করবে না তো কী করবে? আমাদের দেশের মতো ধান্ধাবাজীতে ব্যস্ত থাকা মানুষ উন্নতি করবে? প্রশ্নই উঠে না কবে দূর হবে আমাদের দূর্গতি?

ধারণা পেলাম, এখানকার বাসিন্দাদের অর্থনীতি মূলত চা এবং পর্যটন শিল্পের ওপর নির্ভরশীল এদের সামাজিক জীবন-যাপন শিলিগুড়ি থেকে কিছুটা আলাদা সবাই কর্মব্যস্ত ঠিক, কিন্তু শিলিগুড়িতে Smile স্বভাব রয়েছে, কিন্তু এখানে খানিকটা কাঠখোট্টা অর্থাৎ সেখানে সবাই আগ্রহ নিয়ে এবং আন্তরিকতা দিয়ে কথা বলেন, এখানে তারা Reserve শিলিগুড়িতে বড় হোক ছোট হোক সবাই সবাইকে তুমি করে সম্বোধন করে এবং গভীর আন্তরিকতার সঙ্গে কথা বলে এখানে আপনি সম্বোধন করা হয় এবং বাড়তি কথা বলা হয়না এমনকি শপিংয়ে বসা নারী-পুরুষরাও খদ্দেরকে প্রভাবিত করার জন্য চেষ্টা করেন না অবশ্য ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়

আমি আমাদের হোটেলের পাশের OSWAL B.K.C নামে একটি শীত কাপড়ের দোকান থেকে অন্তত থেকে বার পোশাক কিনে বদলিয়ে বা পরিবর্তন করে নিয়েছি, কিন্তু দোকানী যুবক বার বার হিন্দিতে বলেছেনÑ যতোবার খুঁশি আসবেন, সমস্যা মনে হলেই বদলে নেবেন, কোন সমস্যা নেই শুধু তাই নয়, তিনি কেনাবেচার সময় যতো গল্প করেছেনÑ তা ভাবাই যায় না কোন দোকানী ব্যবসা বাদ দিয়ে এভাবে গল্প করবেনÑ তা আমাদের দেশে ভাবা যায় না

এখানকার দোকানপাটে দামদর করা পছন্দ করা হয় না দামদর করলে বুঝে ফেলেন যে বাংলাদেশ থেকে এসেছি তবে দাম করার একটা ধরণ লক্ষ্য করেছি যেমন কোন পণ্যের দাম শুনে যদি বলা হয় ÔLast কতো? তাহলে তারা কিছুটা দাম কমিয়ে রাখেন

এখানকার অর্থনীতি এবং সমাজনীতি অত্যন্ত সুশৃঙ্খল সকাল টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দোকানপাট খোলা থাকে আইন-শৃঙ্খলা সুশৃঙ্খল এবং কঠোর কোথাও কোন অঘটনের খবর নেই চুরি নেই, ছিনতাই নেই, ইভটিজিং নেই, ধর্ষণ নেই, প্রতারণা নেই, ঘুষ নেই, তদবির নেই, দুর্নীতি নেই রাতভর মেয়েরা একা চলাফেরা করলেও কোন অঘটন ঘটবে না যতো কানাগলিতেই তারা প্রবেশ করুন না কেন এখানকার পাহাড়ি বসতিটাই কানাগলির মতো হিজিবিজি এতো ঘরবাড়ি এবং ট্রেইলের মতো এতো গলি পথ যে কল্পনাও করা যায় না আর সবই হয় নিচ থেকে খাঁড়া নাক বরাবর, নয়তো খাঁড়া পা বরাবর পাহাড়ের গা বেয়ে যে বাড়ি-ঘর-বসতি-প্রতিষ্ঠান-স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছেÑ তা এতোই মজবুত এবং নির্মাণ শৈলীতে বানানো যে ভাবাই যায় না প্রথমে ভেবেছিলাম, ভূমিকম্প হলে কী হবে পাহাড়ের এসব ঘরবাড়ি নিমেষেই ধসে পড়বে নাতো? কিন্তু ঘুরে ঘুরে দেখার সময় লক্ষ্য করেছি, সব স্থাপনাই সাংঘাতিক রকমের মজবুত আমাদের দেশের রাজধানীর মতো থাই-গ্লাসের বাড়ি-ঘর-ভবন-প্রতিষ্ঠান কম, কিন্তু সবই অত্যাধুনিক দালান-কোঠা সব অসাধারণ কারুকার্য করা এছাড়া টিনের এবং কাঠের বাড়ি-ঘর রয়েছে বিপূল এগুলো খুপরির মতোÑ কিন্তু এতো সুন্দর এবং শক্ত-সামর্থ্য করে গড়ে তোলা যেÑ চিন্তাই করা যায় না

এমনিতে দার্জিলিং শহর তেমন পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন না হলেও কোথাও ধুলা-বালি নেই হয়তো ঠান্ডায় বা রাতে কুয়াশা মেঘের কারণে এর দেখা মেলে না এখানকার আবহাওয়া স্বাস্থের জন্য দারুণ উপকারী যেমন আমি নিজেই দেখছিলাম, অ্যাজমা রোগী হিসেবে এই ঠান্ডায় আমার স্বামীর ভয়াবহ অবস্থা হওয়ার কথা কিন্তু অ্যাজমার কোন অস্তিত্বই সে খুঁজে পায়নি সর্দি-কাশিরও খবর নেই

এই আবহাওয়ার কারণেই এখানকার মানুষের শরীরের রং এতো চকচকে উজ্জ্বল হয় এটাও লক্ষ্য করেছিÑ এখানকার পানি অকল্পনীয় রকমের ভাল আমি দেশ থেকে নিয়ে আসা লাইফবয় সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার পর যতোই চেষ্টা করেছি ধুয়ে পিছল ভাব দূর করতে, কোনভাবেই তা পারিনি পানিতে এমন একটা কিছু আছে যা এই পিছল ভাবকে কোনভাবেই মুছতে দেয় না আমাদের ড্রাইভার মনি বলেছিলেন, এখানকার জল খুব ভাল খেয়াল করে দেখবেন রাস্তায় চলা সব মেয়ের চুল পরিস্কার এবং টান টান চুলে কোন খুশকী বা ময়লা কখনই হবে না এই জল ব্যবহার করলে শ্যাম্পুর কোন প্রয়োজন হবে না হোটেলে এসে স্নান করেও সেটা টের পাচ্ছিলাম এই পানি ব্যবহার করে মাথার চুল এতো পিচ্ছিল, পরিস্কার এবং মাথাকে পুরো ভারমুক্ত মনে হয়েছেÑ যা ভাবতেই পারছিলাম না হয়তো কাপড়-চোপড় পরিস্কার করতেও দারুণ মজা

কথায় কথায় এখানকার মানুষের সৎ-জীবনযাপন এবং প্রতারণাহীনতার বিষয় বলেছিলাম হ্যাঁ, এখানকার সমাজব্যবস্থাকে এমনভাবে গড়ে তোলা হয়েছেÑ যাতেকরে কোন মানুষই এসবের আশ্রয় নেয় না আমরা নিজেরাও দেখলাম, আমাদের ড্রাইভার মনিকে বকশিশ হিসেবে দেড়শ টাকা দেবার কথা আমরা এই দেড়শ টাকার এক টাকাও বেশি তাকে দিতে পারিনি কোনভাবেই তিনি রাজী হননি আমাদের দেশে হলে কি হতো?

আমাদের দেশে হলে মনির মতো ড্রাইভার যেনতেন এদিকে সেদিক ঘুরিয়ে আমাদের বিদেয় করতে পারলে খুঁশী হতো কখনই বলতো নাÑ বেড়ানোর এতো এতো জায়গা আছে, আপনাদের যেতেই হবে, না গেলে দারুণ ভুল করবেন! কখনই বলতো নাÑ একটু বিশ্রাম নিয়ে চলুন না আবার বের হই! অথচ মনি এটা করেছেন তার কাছে জেনেছি, আমাদের হোটেল মালিকের মোট ৫টি কার-মাইক্রো আছে এগুলোতে করে পর্যটকদের ঘোরানো হয় যতো জায়গা আছে- তার সব দেখানোটা আমাদের কর্তব্য না হলে মানুষ জানবে কি করে!

আমাদের দেশের মানুষ এভাবে ভাবতেই অভ্যস্ত নন ফাঁকি এবং প্রতারণার আশ্রয় নেয়াই কাজ থেকে বোঝা যায়Ñ এখানকার সমাজব্যবস্থায় মন-মানসিকতায় কী দারুণ নৈতিক উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হয়েছে অথচ এই দার্জিলিং শহর তো ঢাকার তুলনায় কিছুই না ঢাকায় কোন বিদেশি ঢুকলে মনে করবেন না জানি কোন্ ধনাঢ্য দেশে এসেছেন কিন্তু এই পর্যন্তই নীতি এবং মন-মানসিকতায় আমাদের কোনই ধনাঢ্যতা নেই

আমি এবং স্বামী কয়েকবার ভুল করে ১শ টাকার জায়গায় দোকানদারকে ৫শ টাকার নোট দিয়ে চলে আসছিলাম কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে তারা ডেকে বলেছেন, এটা ১শ টাকা নয়, ৫শ টাকা, ভুল করে দিয়েছেন তারা টাকা ফিরিয়ে দিয়েছেন আমাদের হোটেলের বয়Ñ তাকে এক কাজে দেড়শ টাকা দিতে হবে আমি ১শ টাকার নোট মনে করে ৫শ টাকার একটা নোট এবং ৫০ টাকার একটা নোট দিয়েছি সঙ্গে সঙ্গে জিহŸায় কামড় দিয়ে সে বলেছে, একি করছেন? আপনি ভুল করে ৫শ টাকা দিয়েছেন আপনি নিশ্চয়ই এভাবে আরও ভুল করেছেন! বয় টাকা ফেরত দিয়েছে, আর বলেছে, ইন্ডিয়ান ৫শ টাকাকে অনেকেই ১শ টাকা বলে ভূল করে, একটু খেয়াল করে টাকা দেবেন বয় ৫শ টাকা ফিরিয়ে দিয়েছে আমাদের দেশে হলে কি তা করতো? করতো না সামান্য একজন হোটেল বয় থেকেই এখানকার সততা, নিষ্ঠা এবং সৎ-সংস্কৃতি বোঝা যায়

আরও লক্ষ্য করেছি, এখানে কেও বকশিশ নেয়ায় অভ্যস্ত নয় তারা পরিশ্রমের বিনিময়ে ন্যায্যটা নিতে অভ্যস্ত দার্জিলিং শহরে কিন্তু আমরা একটা ভিক্ষুকও দেখিনি নিশ্চয় এটা আপনা-আপনি গড়ে উঠেনি যারা সমাজব্যবস্থা পরিচালনা করেনÑ তাদের কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে, যা আমরা পারিনি জন্য রাষ্ট্রীয় বিত্ত¡-বৈভবের প্রয়োজন হয়নি কারণ আগেই বলেছিÑ দার্জিলিং বা শিলিগুড়ি তো আমাদের দেশের মতো ধনাঢ্য শহর বা নগরী নয়

ঘুরতে গিয়ে শুনেছিÑ দার্জিলিংয়ের সমাজ-জীবন যে শৃঙ্খলা নিয়ে চলে, গ্যাংটকে গেলে থেকে আরও উন্নত অবস্থা দেখা যাবে গ্যাংটক ঝকঝকে-তকতকে শহর কেও একটা ময়লার টুকরোও যেখানে সেখানে ফেলেন না দিয়াশলাইয়ের কাঠি থেকে শুরু করে ছেঁড়া কাগজ পর্যন্ত ফেলতে হয় ডাস্টবিনে বিদেশ থেকে বেড়াতে আসা কেউ যখন ভুলটা করে বসেনÑ তখন তাকে জরিমানা দিতে হয় এতো সুশৃঙ্খল গ্যাংটক শহর সেখানকার জীবনযাত্রা অকল্পনীয় রকমের উন্নত যা এখনও দার্জিলিংয়ে গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি

দার্জিলিংয়ের খারাপ দিকটার ভেতর লক্ষ্য করেছি, আমাদের দেশের মতোই এখানে বার বার বিদ্যুৎ চলে যায় আর একটা সমস্যা হলোÑ এখানকার অধিবাসীরা অন্য কোথাও গিয়ে চাকরি-বাকরি বা অবস্থান করতে পারেন না কারণ ঠান্ডা এলাকার মানুষ বলে তারা গরম এলাকায় ঠিকতেই পারেন না এটা এঁদের জন্য আয়-রোজগারের ক্ষেত্রে বড় বাধা

অর্থনীতি-সমাজনীতি-সংস্কৃতি-শিক্ষা-ব্যবসা-বাণিজ্য-আচার-আচরণÑ এসবের পরে একটা বিষয় বাদ রয়ে গেছে সেটা হলো রাজনীতি দার্জিলিংয়ে কি রাজনীতি নেই? আমাদের দেশের মতো হরতাল, ভাঙচূর, জ্বালাও-পোড়াও, ট্রেন লাইন উপরে ফেলা, ট্রেন জ্বালিয়ে দেয়া, মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মারা, বোমার বিস্ফোরণে মানুষ খতম করা, গুলি চালিয়ে-তলোয়ার চালিয়ে-রামদা চালিয়ে হত্যাকান্ড চালানো হয় না? ক্ষমতা দখল এবং ক্ষমতা রক্ষা করার জন্য রাজনীতির নামে দেশ এবং জনগণকে শায়েস্তা করা হয় না? যতোটুকু সম্ভব খোঁজ নিয়ে জানলাম, রাজনীতির নামে ধরণের কোন কান্ডই এখানে নেই এখানকার মানুষ সবার আগে স্বার্থ দেখেন দেশ এবং জনগণের আমাদের দেশের মতো উল্টো চিন্তা তাদের নেই

আমরা যেদিন হোটেলে উঠলাম সেদিন সন্ধ্যারাতে একটা বিরাট মিছিল দেখলাম হোটেলের তলা সমান নিচে তাকিয়ে দেখলাম মোমবাতি হাতে নারী-পুরুষ স্লোগান দিয়ে মিছিল করছেন স্লোগান শুনে মনে হচ্ছিল যেন আমাদের দেশের শাহবাগ আন্দোলনের মতো তারা তালে তালে বলছেন, -তে কাদের মোল্লাÑ ফাঁসি চাই ফাঁসি চাই -তে নিজামী, ফাঁসি চাই ফাঁসি চাই -তে গোলাম আজম, ফাঁসি চাই ফাঁসি চাই এমন শুনে চরম বিভ্রান্তিতে পড়ে গিয়েছিলাম কিন্তু পরের দিন ভুল ভাঙলো এদিনও একইভাবে মিছিল হলো টিভি খুলে স্লোগান শুনে দেখলাম, ওরা স্লোগান দিচ্ছে নেপালী ভাষায় স্থানীয় কোন এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তারা স্লোগান দিচ্ছে ঠিক শাহবাগ আন্দোলন যেমন অহিংস, এখানেও সেটা দেখলাম মোটেও বিরোধী দল এবং তাদের মৌলবাদী সহযোগিদের মতো হিংস্রতা এখানে নেই

 

----------- চলবে -----------

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thanks for Message

ঢাকা থেকে মালদ্বীপ ভ্রমণ- ৩ [Dhaka to Maldives Travel-3]

  ঢাকা থেকে মালদ্বীপ ভ্রমণ - ৩ [Dhaka to Maldives Travel-3] ঢাকা থেকে মালদ্বীপ ভ্রমণ- ৩ [Dhaka to Maldives Travel-3] : কোথাও নীল কোথাও স...